সকাল বেলার পান্তা, এক শরীরে তিন পুরুষের বল
পান্তা ভাত গ্রামীণ বাঙালি জনগোষ্টির একটি জনপ্রিয় খাবার। নৈশভোজের
জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে সংরক্ষণের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখা হতো।
পরদিন এই পানিতে রাখা ভাতের নাম হতো পান্তা ভাত।, পান্তা ভাত
গ্রামীণ মানুষ সকালের নাশতা হিসাবে খেয়ে থাকে। সাধারণত লবণ, কাচা মরিচ ও
পেঁয়াজ মিশিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া হয়, অনেকেই আবার এর সাথে আলু
ভর্তা,বেগুন ভর্তা, ডাউল ভর্তা, শুটকি ভর্তা বা সরিষার তেল দিয়ে পান্তা
ভাতের রুচি বৃদ্ধি করে থাকে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতকে পানিতে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা
পান্তায় পরিণত হয়। ভাত মূলত পুরোটাই শর্করা (Carbohydrate)। ভাতে পানি
দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি (Fermentation) ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) বা
ইস্ট (Yeast) শর্করা ভেঙ্গে ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড
তৈরি করে। এই ইথানলই পান্তাভাতের ভিন্ন রকম স্বাদের জন্য দায়ী। পান্তা
ভাত মূলত ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে খাবার
অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু পানি দিয়ে রাখলে গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া
সেখানে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে যার ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় (pH কমে)। তখন পচনকারি ও অনান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।
১২-২৪ ঘন্টা পরে পান্তা ভাত তৈরী হয়। কোন প্রকার সংক্রমন এড়াতে খাবারের পাত্রটি সতর্কতার সংগে ঢেকে রাখতে হবে। সকাল বেলা পান্তাভাত লবন, লেবু, মরিচ এবং কাটা পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়া হয়। খাওয়ার সময় পানি আলাদা করা হয় অনেকসময়। অনেকে পান্তাভাতের সঙ্গে ভোজ্য তেল ব্যবহার করে।
১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে (১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর) ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন
থাকে, যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ১০০
গ্রাম পান্তাভাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৩৯ মিলিগ্রাম এবং
ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম; যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে
ক্যালসিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম। এছাড়া পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ
কমে হয় ৩০৩ মিলিগ্রাম যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে সোডিয়াম থাকে ৪৭৫
মিলিগ্রাম।
পান্তা ভাত ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। পান্তাভাত শর্করাসমৃদ্ধ জলীয় খাবার। গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। জলীয় খাবার বলে শরীরের পানির অভাব মেটায় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। পান্তা ভাত খেলে শরীর হালকা এবং কাজে বেশি শক্তি পাওয়া যায়, কারণ এটি ফারমেন্টেড বা গাঁজানো খাবার। মানবদেহের জন্য উপকারী বহু ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতের মধ্যে বেড়ে উঠে।
পান্তা ভাত ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। পান্তাভাত শর্করাসমৃদ্ধ জলীয় খাবার। গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। জলীয় খাবার বলে শরীরের পানির অভাব মেটায় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। পান্তা ভাত খেলে শরীর হালকা এবং কাজে বেশি শক্তি পাওয়া যায়, কারণ এটি ফারমেন্টেড বা গাঁজানো খাবার। মানবদেহের জন্য উপকারী বহু ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতের মধ্যে বেড়ে উঠে।
পেটের পীড়া ভালো হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজীবতা বিরাজ করে এবং
শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে। এ ভাতে পেটের পীড়া ভালো হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা
দূর হয় এবং শরীরে সজীবতা বিরাজ করে। পাশাপাশি শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায়
থাকে।
সাধারণত,
কৃষক পরিবারে রাতের বেঁচে যাওয়া ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঠাণ্ডা রাখার একটি
প্রচলণ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। সেই ভাত সকালে খাওয়া হয় নাস্তা হিসেবে। সঙ্গে
থাকে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ভর্তা বা গত রাতে থেকে যাওয়া তরকারি। আর পান্তা
ভাতের সঙ্গে মাটির সানকি যেন মানিক জোড়।
পুষ্টিবিদদের
মতে, এই পান্তা ভাত শরীরের জন্যে বেশ উপকারী। পানি বাড়িয়ে দেয় ভাতের
পুষ্টিগুণ। রাতের অবশিষ্ট ভাত সকালে কৃষকের নাস্তার পিঁড়িতে হাজির হয়
আর্শীবাদ হয়ে। দিনের প্রচণ্ড রোদ্রের মোকাবেলা জন্যে প্রস্তুত করে তোলে
তাঁকে।
বাংলাদেশ
এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিল-এর পুষ্টি বিভাগের এক গবেষণাপত্রে দেখা যায়,
সদ্য রান্না করা ভাতের চেয়ে পান্তা ভাত বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এতে আরও বলা
হয়, পান্তা ভাত সহজে হজম হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এর ফলে
বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায়।
কাউন্সিলের
পুষ্টি বিভাগের পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের লোকজন সাধারণত
ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের ঘাটতির মধ্যে থাকেন। পান্তা ভাত সেই সমস্যা দূর করতে
সাহায্য করে।”
পান্তা
ভাতের আরও গুণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়িয়ে দেয়। “বিশেষ করে, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের যে আয়রনের অভাবে হয়, নিয়মিত
পান্তা ভাত খাওয়া সেই অভাব পূরণে সহায়তা করতে পারে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির একজন চিকিৎসক কাউসার আলম বলেন, পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সি রয়েছে।
তবে এর
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘ঝিমুনিভাব’-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,
“পান্তা ভাতের পানিতে যে ব্যাক্টেরিয়া জন্ম নেয় তা পেটে কোন সমস্যা তৈরি
করে কিনা সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।”
এশিয়ান
জার্নাল অব ক্যামেস্ট্রি-তে প্রকাশিত অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, পান্তা ভাতে
রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্কসহ
বিভিন্ন প্রকার খনিজপদার্থ।
যে সকল পুরুষদের যৌন দুর্বলতা আছে, তারা পান্তা খাবেন নিয়মিত। সাথে থাকবে কচুর তরকারি। কারন পান্তায় আছে জিঙ্ক! প্রাকৃতিক জিঙ্ক যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর কচুর গুনাবলী পাবেন কচুর গুনাগুন এই লিংকে।
No comments